টঙ্গীর
বিসিক শিল্পনগরীতে একটি অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল প্যাকেজিং কারখানায় ভয়াবহ
বিস্ফোরণের পর আগুন লেগে অন্তত ২৪ জন নিহত ও ৫০ জন আহত হয়েছেন। ফায়ার
সার্ভিসের প্রাথমিক ধারণা, কারখানার বয়লার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত
হয়েছে। বিস্ফোরণে পাঁচতলা কারখানা ভবন ও পাশের দুটি তিনতলা ভবন ধসে পড়েছে।
আরেকটি ছয়তলা ভবন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি
গঠন করা হয়েছে।
গাজীপুরের টঙ্গী স্টেশন রোড ও কালীগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের
রেলক্রসিংয়ের পাশে বিসিক শিল্পনগরীর ভেতর টাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড নামে এই
কারখানার অবস্থান। ঈদ উপলক্ষে আজ রোববার থেকে কারখানায় ছুটি শুরু হওয়ার
কথা ছিল। আহত শ্রমিক, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের সদস্যরা জানিয়েছেন, গতকাল
শনিবার সকাল ছয়টার দিকে কারখানার ভেতরে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। মুহূর্তেই
আগুন ছড়িয়ে পড়ে। কারখানার পূর্ব পাশের দোতলা অফিস ভবন ধসে পড়ে পাশের একটি
রাস্তার ওপর। সেখানে চাপা পড়ে মারা যান রোজিনা আক্তার (২০), তাহমিনা
আক্তার (১৮) ও রিকশাচালক রাশেদ মিয়া। পাশের একটি বস্তিতে আশিক আহমেদ নামে
১২ বছরের এক শিশুও নিহত হয়। কয়েকজন শ্রমিক ভবন থেকে লাফিয়ে বের হতে পারলেও
বেশির ভাগ শ্রমিক আটকা পড়েন। তবে কতজন আটকা পড়েছেন, সে সম্পর্কে
সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তাঁরা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ পান এবং এর প্রভাবে ভূমিকম্পের মতো আশপাশের মাটি কেঁপে ওঠে।
কারখানার মালিক সিলেট-৬ আসনের সাবেক সাংসদ সৈয়দ মো. মকবুল হোসেন প্রথম আলোকে
বলেন, তাঁর কারখানায় সাড়ে চার শতাধিক শ্রমিক তিন পালায় কাজ করেন। গত
শুক্রবার রাতের পালায় ৭৫ জনের মতো কাজ করছিলেন। তবে স্থানীয় লোকজন
জানিয়েছেন, সকাল ছয়টায় দিনের পালা শুরু হওয়ার কথা ছিল। এর পাঁচ মিনিট আগে
আগুনের ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিসের টঙ্গী ও গাজীপুর স্টেশন থেকে একাধিক ইউনিট সেখানে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। স্থানীয় লোকজনও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। কারখানার পাশের বাড়ির মনিরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘুম থেকে উঠে বিকট শব্দ শুনতে পাই। তখন ভূমিকম্পের মতো ঝাঁকুনির সৃষ্টি হয়। কারখানার দিকে তাকিয়ে দেখি ভবন ধসে পড়ছে। ভেতর থেকে কয়েকজন সাহায্যের জন্য চিৎকার করছেন।’
রাত ১০টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও আগুন জ্বলছিল। ভবনের নির্মাণত্রুটি ও ভবনে কেমিক্যাল থাকায় ১৪ ঘণ্টার চেষ্টায়ও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসছে না বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানিয়েছেন।
স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করেন, ভবনটির নির্মাণে কোনো নিয়মনীতি মানা হয়নি। সত্তরের দশকে তৈরি ভবনটিই পরে ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়েছে। কারখানার মূল ভবন প্রায় ৪৫ বছরের পুরোনো। তা ছাড়া ভবনটিতে জরুরি নির্গমনপথ নেই। একটিমাত্র ফটক দিয়ে সবাই যাওয়া-আসা করতেন।রাত আটটায় ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মোশাররফ হুসেন বলেন, তিনটি ভবনে আগুন জ্বলছিল। এখন পাশের ছয়তলা ভবনে আগুন জ্বলছে। ছয়তলা ভবনটিও যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের বয়লার পরিদর্শক শরাফত আলী প্রথম আলোকে বলেন, কারখানার দুজন বয়লার অপারেটর তাঁকে জানিয়েছেন, ভোর চারটার দিকে বয়লার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বয়লারের পাশের গ্যাস কন্ট্রোলরুমে আগুন লেগে থাকতে পারে বলে তাঁর ধারণা। তবে মোশাররফ হুসেন বলেন, প্রথম বিস্ফোরণটি বয়লারেই হয়েছিল বলে তাঁর অনুমান। না হলে এত জোরে বিস্ফোরণের শব্দ হতো না।
স্থানীয় বাসিন্দা সেলিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, কারখানার দেয়াল ঘেঁষে তাঁর ৬৫টি টিনশেড ঘর রয়েছে। বিস্ফোরণের পরপর তাঁরা দেখতে পান, কারখানার একজন শ্রমিক লাফ দিয়ে তাঁদের টিনের চালে পড়েন। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঠিক সে সময় তিনি দেখেন, ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে এ
কজন লোক তাঁর দিকে তাকিয়ে ‘মা, আমাকে বাঁচান’ বলে চিৎকার করছেন। লোকটার শরীরের পেছন দিকে ততক্ষণে আগুন ধরে গেছে। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘আমি লোকটার জন্য কিছুই করতে পারিনি।’
সেলিনা বেগম আরও বলেন, বিস্ফোরণের পর ভবনের বিভিন্ন জিনিসের সঙ্গে মানুষের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিটকে আশপাশে পড়েছে। তিনি ১৫-২০ জন শ্রমিককে দেখেছেন, যাঁদের শরীরে আগুন লেগে গিয়েছিল এবং তাঁরা বাঁচার জন্য আকুতি জানাচ্ছিলেন।
কারখানার পাশেই একটি টিনশেড বাড়িতে থাকেন আফরিন আক্তার। তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে মাটি প্রচণ্ডভাবে কেঁপে ওঠে। আমরা সবাই মনে করেছি, ভূমিকম্প হচ্ছে। দ্রুত বের হয়ে এসেছি।’
নিহত প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমানের প্রত্যক্ষদর্শী স্ত্রী নিগার সুলতানা বলেন, তাঁর স্বামী সাত বছর ধরে ওই কারখানায় চাকরি করছেন। গতকাল ভোর ছয়টার দিকে তিনি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। তিনি বাসা থেকে দেখতে পান, তাঁর স্বামীর কারখানা থেকে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে সেখান থেকে স্থানীয় লোকজন তাঁর স্বামীসহ কয়েকজনের লাশ হাসপাতালের দিকে নিয়ে যান।
ওই কারখানার খুব কাছে টঙ্গী রেলক্রসিংয়ের দায়িত্বে থাকা পোর্টম্যান সাইজুল হক বলেন, কারখানার পাঁচতলা ভবনের চারতলায় বেশ কিছু শ্রমিক জানালা দিয়ে হাত নেড়ে তাঁদের বাঁচানোর আকুতি জানাতে থাকেন। এ সময় স্থানীয় ব্যক্তিরা মই নিয়ে বড় হাতুড়ি দিয়ে দেয়াল ভেঙে শ্রমিকদের উদ্ধারের চেষ্টা চালান। একপর্যায়ে ধোঁয়া ও তাপের কারণে তাঁদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ঘটনাস্থল ঘিরে থাকা মানুষের মুখে আগুনে পুড়তে থাকা অনেক মানুষের বর্ণনা পাওয়া গেছে। এসব মানুষকে উদ্ধার করতে না পারায় আক্ষেপ করছিলেন অনেকেই।
টঙ্গী ৫০ শয্যা সরকারি হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, দেয়ালচাপায় এবং আগুনে দগ্ধ ও শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে ২৪ জন নিহত ও অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।
যাঁরা নিহত হয়েছেন: গাজীপুরের সিভিল সার্জন আলী হায়দার খান বলেন, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকার নবাবগঞ্জের গোপাল দাস (২৫), একই এলাকার ক্লিনার শংকর সরকার (৩৫), পিরোজপুরের আল মামুন (৪০), চাঁদপুরের মতলবের নিরাপত্তাকর্মী আবদুল হান্নান (৫০), কুড়িগ্রামের ইদ্রিস আলী (৪০), ভোলার দৌলতখান এলাকার নিরাপত্তাকর্মী জাহাঙ্গীর আলম (৬৫), টাঙ্গাইলের গোপালপুর এলাকার সুভাষ চন্দ্র (৩০), ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকার রফিকুল ইসলাম (৪০), একই জেলার ঈশ্বরগঞ্জ এলাকার রিকশাচালক আবদুর রাশেদ (২৫), কারখানার শ্রমিক সিলেটের গোপালপুর এলাকার ওয়ালি হোসাইন (৪০), একই এলাকার মো. সোলায়মান (৩০), সাইদুর রহমান (৫১), মাইন উদ্দিন (২৯) ও এনামুল হক (৩৫), ত্রিশালের প্রকৌশলী আনিসুর রহমান (৪৫), পথচারী হবিগঞ্জের রোজিনা আক্তার (২০) ও তাঁর ছোট বোন তাহমিনা আক্তার (১৮) ও শিশু মো. আশিক (১২)। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দেলোয়ার হোসেন (৩৫), ওয়াহিদুজ্জামান (৪০) ও আনোয়ার হোসেনের (৩৫) নাম জানা গেছে। নিহত এক নারীসহ অন্যদের নাম জানা যায়নি। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে আসমা নামে এক তরুণীর কথা জানা যায়, যিনি দুর্ঘটনার সময় ওই রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নিহত হয়েছেন। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ বলে জানা গেছে।
তদন্ত কমিটি: ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) আনিস মাহমুদ বলেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. বদিউজ্জামানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে ১০ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছে। এদিকে গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম আলম বলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাহেনুল ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে ১৫ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের টঙ্গী ও গাজীপুর স্টেশন থেকে একাধিক ইউনিট সেখানে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। স্থানীয় লোকজনও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। কারখানার পাশের বাড়ির মনিরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘুম থেকে উঠে বিকট শব্দ শুনতে পাই। তখন ভূমিকম্পের মতো ঝাঁকুনির সৃষ্টি হয়। কারখানার দিকে তাকিয়ে দেখি ভবন ধসে পড়ছে। ভেতর থেকে কয়েকজন সাহায্যের জন্য চিৎকার করছেন।’
রাত ১০টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও আগুন জ্বলছিল। ভবনের নির্মাণত্রুটি ও ভবনে কেমিক্যাল থাকায় ১৪ ঘণ্টার চেষ্টায়ও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসছে না বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানিয়েছেন।
স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করেন, ভবনটির নির্মাণে কোনো নিয়মনীতি মানা হয়নি। সত্তরের দশকে তৈরি ভবনটিই পরে ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়েছে। কারখানার মূল ভবন প্রায় ৪৫ বছরের পুরোনো। তা ছাড়া ভবনটিতে জরুরি নির্গমনপথ নেই। একটিমাত্র ফটক দিয়ে সবাই যাওয়া-আসা করতেন।রাত আটটায় ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মোশাররফ হুসেন বলেন, তিনটি ভবনে আগুন জ্বলছিল। এখন পাশের ছয়তলা ভবনে আগুন জ্বলছে। ছয়তলা ভবনটিও যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের বয়লার পরিদর্শক শরাফত আলী প্রথম আলোকে বলেন, কারখানার দুজন বয়লার অপারেটর তাঁকে জানিয়েছেন, ভোর চারটার দিকে বয়লার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বয়লারের পাশের গ্যাস কন্ট্রোলরুমে আগুন লেগে থাকতে পারে বলে তাঁর ধারণা। তবে মোশাররফ হুসেন বলেন, প্রথম বিস্ফোরণটি বয়লারেই হয়েছিল বলে তাঁর অনুমান। না হলে এত জোরে বিস্ফোরণের শব্দ হতো না।
স্থানীয় বাসিন্দা সেলিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, কারখানার দেয়াল ঘেঁষে তাঁর ৬৫টি টিনশেড ঘর রয়েছে। বিস্ফোরণের পরপর তাঁরা দেখতে পান, কারখানার একজন শ্রমিক লাফ দিয়ে তাঁদের টিনের চালে পড়েন। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঠিক সে সময় তিনি দেখেন, ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে এ
কজন লোক তাঁর দিকে তাকিয়ে ‘মা, আমাকে বাঁচান’ বলে চিৎকার করছেন। লোকটার শরীরের পেছন দিকে ততক্ষণে আগুন ধরে গেছে। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘আমি লোকটার জন্য কিছুই করতে পারিনি।’
সেলিনা বেগম আরও বলেন, বিস্ফোরণের পর ভবনের বিভিন্ন জিনিসের সঙ্গে মানুষের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিটকে আশপাশে পড়েছে। তিনি ১৫-২০ জন শ্রমিককে দেখেছেন, যাঁদের শরীরে আগুন লেগে গিয়েছিল এবং তাঁরা বাঁচার জন্য আকুতি জানাচ্ছিলেন।
কারখানার পাশেই একটি টিনশেড বাড়িতে থাকেন আফরিন আক্তার। তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে মাটি প্রচণ্ডভাবে কেঁপে ওঠে। আমরা সবাই মনে করেছি, ভূমিকম্প হচ্ছে। দ্রুত বের হয়ে এসেছি।’
নিহত প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমানের প্রত্যক্ষদর্শী স্ত্রী নিগার সুলতানা বলেন, তাঁর স্বামী সাত বছর ধরে ওই কারখানায় চাকরি করছেন। গতকাল ভোর ছয়টার দিকে তিনি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। তিনি বাসা থেকে দেখতে পান, তাঁর স্বামীর কারখানা থেকে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে সেখান থেকে স্থানীয় লোকজন তাঁর স্বামীসহ কয়েকজনের লাশ হাসপাতালের দিকে নিয়ে যান।
ওই কারখানার খুব কাছে টঙ্গী রেলক্রসিংয়ের দায়িত্বে থাকা পোর্টম্যান সাইজুল হক বলেন, কারখানার পাঁচতলা ভবনের চারতলায় বেশ কিছু শ্রমিক জানালা দিয়ে হাত নেড়ে তাঁদের বাঁচানোর আকুতি জানাতে থাকেন। এ সময় স্থানীয় ব্যক্তিরা মই নিয়ে বড় হাতুড়ি দিয়ে দেয়াল ভেঙে শ্রমিকদের উদ্ধারের চেষ্টা চালান। একপর্যায়ে ধোঁয়া ও তাপের কারণে তাঁদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ঘটনাস্থল ঘিরে থাকা মানুষের মুখে আগুনে পুড়তে থাকা অনেক মানুষের বর্ণনা পাওয়া গেছে। এসব মানুষকে উদ্ধার করতে না পারায় আক্ষেপ করছিলেন অনেকেই।
টঙ্গী ৫০ শয্যা সরকারি হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, দেয়ালচাপায় এবং আগুনে দগ্ধ ও শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে ২৪ জন নিহত ও অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।
যাঁরা নিহত হয়েছেন: গাজীপুরের সিভিল সার্জন আলী হায়দার খান বলেন, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকার নবাবগঞ্জের গোপাল দাস (২৫), একই এলাকার ক্লিনার শংকর সরকার (৩৫), পিরোজপুরের আল মামুন (৪০), চাঁদপুরের মতলবের নিরাপত্তাকর্মী আবদুল হান্নান (৫০), কুড়িগ্রামের ইদ্রিস আলী (৪০), ভোলার দৌলতখান এলাকার নিরাপত্তাকর্মী জাহাঙ্গীর আলম (৬৫), টাঙ্গাইলের গোপালপুর এলাকার সুভাষ চন্দ্র (৩০), ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকার রফিকুল ইসলাম (৪০), একই জেলার ঈশ্বরগঞ্জ এলাকার রিকশাচালক আবদুর রাশেদ (২৫), কারখানার শ্রমিক সিলেটের গোপালপুর এলাকার ওয়ালি হোসাইন (৪০), একই এলাকার মো. সোলায়মান (৩০), সাইদুর রহমান (৫১), মাইন উদ্দিন (২৯) ও এনামুল হক (৩৫), ত্রিশালের প্রকৌশলী আনিসুর রহমান (৪৫), পথচারী হবিগঞ্জের রোজিনা আক্তার (২০) ও তাঁর ছোট বোন তাহমিনা আক্তার (১৮) ও শিশু মো. আশিক (১২)। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দেলোয়ার হোসেন (৩৫), ওয়াহিদুজ্জামান (৪০) ও আনোয়ার হোসেনের (৩৫) নাম জানা গেছে। নিহত এক নারীসহ অন্যদের নাম জানা যায়নি। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে আসমা নামে এক তরুণীর কথা জানা যায়, যিনি দুর্ঘটনার সময় ওই রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নিহত হয়েছেন। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ বলে জানা গেছে।
তদন্ত কমিটি: ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) আনিস মাহমুদ বলেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. বদিউজ্জামানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে ১০ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছে। এদিকে গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম আলম বলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাহেনুল ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে ১৫ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শক করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান
কামাল বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী, ফায়ার
সার্ভিস, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা তাৎক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেছেন। না হলে
হয়তো আগুন আরও ব্যাপক হতো। এ কারখানার কেমিক্যাল ব্যবহারের অনুমোদন ছিল কি
না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, তদন্ত চলছে। তদন্তের মাধ্যমে সব উদ্ঘাটিত হবে।